Total Pageviews

November 15, 2011

পাকিস্তানের কাছে বাংলাদেশের হার

মহিলা বিশ্বকাপ ক্রিকেটের বাছাইপর্বের প্রথম ম্যাচেই বাংলাদেশকে বিমুখ করল সালমা বাহিনী। গতকাল শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টুর্নামেন্ট ও নিজেদের প্রথম ম্যাচে শক্তিশালী পাকিস্তানের কাছে ৭৩ রানে হার মানে বাংলাদেশ। গতকাল ‘বি’ গ্রুপের প্রথম খেলায় টস জিতে আগে ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ। ব্যাট করতে নেমে বিসমাহ মারুফের অর্ধশতকের ওপর ভর করে ৪৯ ওভার ৫ বলে অলআউট হওয়ার আগে ১৯৭ রানের ইনিংস দাঁড় করায় পাকিস্তান। জবাবে ব্যাট করতে নেমে ৪২ ওভার ২ বল মোকাবিলা করে ১২৪ রানে অলআউট হয়ে যায় স্বাগতিক বাংলাদেশ। জয়ের জন্য ১৯৮ রানের লক্ষ্যমাত্রাকে সামনে রেখে ব্যাট করতে নেমে মোটামুটি ভালো একটি সূচনা এনে দেন বাংলাদেশের দুই ওপেনার আয়শা আক্তার ও পান্না ঘোষ। এ উদ্বোধনী জুটি ৩৩ রানের একটি পার্টনারশিপ গড়েন। এ জুটিতে ফাটল ধরান পাক পেসার কানিতা জলিল। ওপেনার আয়শা আক্তারকে (১৯) আসমাবিয়ার ক্যাচে পরিণত করান তিনি। আয়শা আক্তার উইকেট ছাড়ার পর নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারিয়ে ধীরে ধীরে ম্যাচ থেকে ছিটকে যায় মমতা মাবেনের শিষ্যরা। দলের সর্বোচ্চ রান আসে অতিরিক্ত খাত থেকে। পাক বোলারদের অনিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ের ফলে অতিরিক্ত ২৫টি রান পায় বাংলাদেশ। দলের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে সালমা আক্তার সর্বোচ্চ ১৯ রান করেন। বাংলাদেশ দলের কোনো ব্যাটসম্যানই ২০’র ঘরে পৌঁছতে পারেননি। ছয়জন পৌঁছান দুই অঙ্কের ঘরে। কিন্তু কেউই নিজেদের ইনিংসকে তেমন বড় করতে পারেননি। আয়শা ছাড়া দলের অন্যদের মধ্যে চামেলি খাতুন, লতা মণ্ডল ১৪ রান ও ফারজানা হক ১২ রান করেন। পাকিস্তানের পক্ষে নিদা দার আট ওভার বল করে ২৯ রান দিয়ে সর্বোচ্চ ৪ উইকেট নেন। বিসমাহ মারুফ নেন দুটি উইকেট। এর আগে ব্যাট করতে নেমে ঢিমেতালে নিজেদের ইনিংস শুরু করে পাকিস্তান। দলীয় ১১ রানেই পাক অধিনায়ক সানা মীরকে সালমা খাতুনের ক্যাচ বানিয়ে সাজ ঘরে ফেরান বাংলাদেশের পেসার লতা মণ্ডল। এরপর দলীয় ৪৮ রানে দ্বিতীয় ও ৫৬ রানে তৃতীয় উইকেট হারায় পাকিস্তান। চতুর্থ উইকেট জুটিতে জেভেরিয়া খান ও বিসমাহ মারুফ ৭৮ রানের একটি পার্টনারশিপ গড়লে বড় সংগ্রহের দিকে এগুতে থাকে পাকিস্তান। দলের ব্যাটসম্যানরা বড় একটি স্কোর গড়ার স্বপ্ন দেখলেও তা বাস্তবায়িত হতে দেননি বাংলাদেশ দলের স্পিনার খাদিজাতুল কুবরা। বল হাতে আলো ছড়িয়েছেন অফস্পিনার খাদিজা। তার ঘূর্ণি বলে বিভ্রান্ত হয়ে অনেক বড় সংগ্রহের ইঙ্গিত দেয়া পাকিস্তান এক বল বাকি থাকতেই ১৯৭ রানে অলআউট হয়ে যায়। খাদিজার ঘূর্ণি বলের মায়াজালে পড়ে মাত্র ৩৬ রানে শেষ ৬ উইকেট হারায় পাকিস্তান। এর আগে দলীয় ১৩৪ রানে জাভেরিয়াকে (৩০) ফিরিয়ে দিয়ে স্বাগতিকদের খেলায় ফেরান খাদিজা। শেষ পর্যন্ত খাদিজার তৃতীয় শিকারে পরিণত হয়ে ৭৯ রান করে সাজঘরে ফেরেন বিসমাহ। দলের রান তখন ১৯৭। ওই রানেই শেষ দুই উইকেট হারায় পাকিস্তান। দলের পক্ষে বিসমাহ মারুফ সর্বোচ্চ ৭৮ রান করেন। ওয়ানডে ক্যারিয়ারে এটি তার সর্বোচ্চ রানের ইনিংস। তার এ ইনিংসটিতে ছয়টি দর্শনীয় চারের মার রয়েছে। এছাড়া কানিতা জলিল ৩৩ রানের ইনিংস খেলেন। যাচ্ছেতাই ফিল্ডিং করেছেন বাংলাদেশ দলের ফিল্ডাররা। তারা চারটি ক্যাচের সহজ সুযোগ হাতছাড়া না করলে খেলার চিত্র অন্যরকম হতে পারতো। চতুর্থ উইকেটে ৭৮ রান যোগ করার পথে একবার করে পর পর দু’ওভারে জীবন পান বিসমাহ। বাংলাদেশের অধিনায়ক সালমা খাতুনের পরপর দুই ওভারে শুকতারা ও খাদিজা দুটি সহজ ক্যাচ হাতছাড়া করেন। বাংলাদেশ দলের পক্ষে ১০ ওভার বল করে ৪০ রান দিয়ে সর্বোচ্চ চার উইকেট নেন খাদিজাতুল কুবরা। ২৬ রান দিয়ে দুই উইকেট নেন সালমা। দুটি উইকেটের পাশাপাশি তিনটি দুর্দান্ত ক্যাচ ধরেন তিনি। এদিকে পাকিস্তানের কাছে ৭৩ রানে হারের পেছনে দলের বাজে ফিল্ডিংকে দায়ী করেন বাংলাদেশের কোচ মমতা মাবেন। ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘আমরা গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি ক্যাচ ফেলেছি। শুরুতেই তিন উইকেট পড়ে যাওয়ার পর অনেকটা চাপে ছিল পাকিস্তান। আর ওই সময়ে নতুন দুই ব্যাটসম্যান একবার করে জীবন পান। সর্বোপরি আমাদের ফিল্ডিং ভালো হয়নি। আমরা ২০ থেকে ৩০ রান বেশি দিয়েছি। ১৭০ থেকে ১৭৫ রানের মধ্যে তাদের আটকাতে পারলে খেলার ফলাফল অন্যরকম হতে পারতো।’ শীর্ষ ছয়ে উঠতে হলে পরের দুই ম্যাচে আয়ারল্যান্ড ও জাপানকে হারাতেই হবে বাংলাদেশের। আর স্বাগতিকদের শেষ ম্যাচের প্রতিপক্ষ ওয়েস্ট ইন্ডিজকে টুর্নামেন্টের সবচেয়ে শক্তিশালী দল বলে মনে করেন মমতা। এদিকে প্রথম ম্যাচেই বাংলাদেশের বিপক্ষে বড় জয় পেয়ে দারুণ উচ্ছ্বসিত পাকিস্তান দলের অধিনায়ক সানা মীর। পরবর্তী ম্যাচগুলোতেও জয়ের ধারা অব্যাহত রাখতে চান তারা।

No comments:

Post a Comment